খুশির তুফান [Khushir Tufan]
তিনি একজন গুণী মানুষ, এক গুণী শিল্পী, যাঁকে আমি ভার্চুয়ালি চিনি। তিনিও আমাকে ভার্চুয়ালিই চেনেন। মাঝে মধ্যে আমাদের দু-এক কথা আদান-প্রদানও হয়। বলা বাহুল্য আক্ষরিক অর্থেই সেসব সংক্ষিপ্ত বার্তালাপ দু-এক শব্দের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকে। ভালভাবে ব্যাক্তি মানুষটিকে জানা আমার পক্ষে সম্ভব হয়ে ওঠেনি বটে, তবে কাজের ‘তিনি’টি যে আপন মহিমায় আমার মনে জায়গা করে নিয়েছেন সে ব্যপারে সন্দেহের কোনও অবকাশ নেই। আমি তাঁর কাজ দেখতে দেখতে আমার মত করেই তাঁকে চেনবার চেষ্টা করেছি। সে পরিচয় ভার্চুয়ালি হলেও যেভাবে আমি তাঁর গুণগ্রাহী হয়ে উঠেছি, তাকে অন্তত আমি ভার্চুয়াল বলতে পারব না।
পরিচয় না বলে বর্ণপরিচয় বলাই শ্রেয়। শিল্পী শ্রী সোমনাথ ঘোষ কে আমি যেটুকু দেখে উঠতে পেরেছি; তিনি একজন অসামান্য অক্ষর শিল্পী। ক্যালিগ্রাফি যে কী নেশা ধরানো জিনিস কী বলব… প্রত্যেকটা অক্ষরের এক একটা অবয়ব থাকে, তার গঠনের মধ্যে থাকে তার হয়ে ওঠার গল্প। তার দিকে অপলক তাকিয়ে থাকলে সে গল্প পড়ে ফেলা যায়। ঠিক যেমন অনামা নদীর একফালি বাঁকের দিকে, তার শান্ত জলের নিরবধি বয়ে যাওয়ার দিকে অপলক তাকিয়ে থাকলে সে নদীর গল্প কথা হয়ে কানে বাজে, যে গল্পে শোনা যায় এমনকি তাকে ঘিরে গড়ে ওঠা সভ্যতার কথাও; এক একটা অক্ষরের শরীরেও তেমনি অনেক গল্প শুনতে পাওয়া যায়… একটা হয়ে ওঠা অবয়বের মধ্যে ব্যাকরণগত ধ্বনি ছাড়াও ধরা থাকে আরও অনেক অনেক কথা। সমাজ সংসার, জীবনের কলরব – সব। যার কোনটাই ‘মিছে’ নয়।
সোমনাথবাবু সেই বিরল শিল্পীদের একজন, যিনি অক্ষরের অবয়বে ভাষা পুরে দিতে জানেন। এসব কথা বলছি, বলার ধৃষ্টতা দেখাচ্ছি – আর কিছুই যে পারি না। দূর থেকে দেখে মনে হয়েছে, অক্ষরগুলোকে তিনি যেভাবে চেনেন; বড্ড সহজ সে চেনা – তার মধ্যে কোনও ফাঁকি তো নেইই, কোনও ভণিতাও নেই। মাঝে মাঝে তাঁর কাজ দেখে বরং ভেবেছি তিনিই যে শুধু অক্ষরগুলোকে চেনেন তা নয়, অক্ষরেরাও তাঁকে ভীষণভাবে চেনে। কই আর পাঁচ জনের হাতে তারা তো এভাবে হয়ে ওঠে না, গল্প বলে না… সোমনাথবাবুর অক্ষরজ্ঞান দেখে অনেক বার নিজেকে নিরক্ষর বলে মনে হয়েছে। তা সম্ভবত তাঁকে একবার বলেও ছিলাম।
প্রায় মাসদুয়েক হতে চলল (কিম্বা আরও বেশি), একদিন আবিষ্কার করলাম সোমনাথবাবুর ফেসবুকের স্টেটাসে একটি গানের লাইন লেখা রয়েছে। রবীন্দ্রনাথের তৈরি পরিচিত একটি গান – প্রাণে খুশির তুফান উঠেছে।
খুশি ব্যাপারটাই এরকম। এর কোনও মাথাও নেই মুন্ডুও নেই। কোথা থেকে কোন হাওয়া কখন এসে যে ইচ্ছে তুফান ছুটিয়ে দেয় আগেভাগে তার খবর দেওয়া কোনও হাওয়া-আপিসেরই কম্ম না।
লাইনটা দেখামাত্র বহুবার শোনা গানটা আমায় কেমন যেন চেপে ধরল। মাথার ভেতর গুনগুন করতে থাকলো কেবলই। বুঝলাম গানটা না শেখা পর্যন্ত, না রেকর্ড করা পর্যন্ত শান্তি পাব না। সোমনাথবাবুর স্টেটাসের নিচে বোধহয় লিখেও দিয়েছিলাম, দু কথা…
আমার মনের মধ্যে একটা চেনা সুরকে এভাবে সেলোটেপ দিয়ে সেঁটে দিলেন যিনি, তাঁর কাছে তো আমার কৃতজ্ঞতার এমনিতেই শেষ ছিল না, আরও ঋণী হয়ে গেলাম। এই যে গানটা বাজিয়ে, রেকর্ড করে আনন্দ পেলাম, আমার খুশির সে তুফানের অংশীদার তো তিনিও। কাজেই আমার এই সামান্য চেষ্টাটা আমি তাঁর নাম করেই তুলে রেখেছিলাম, সময়ের অভাবে দিয়ে ওঠা সম্ভব হচ্ছিল না, অবশেষে আজ দিতে পেরে ভাল লাগছে।
সোমনাথবাবু ছবি তুলতে ভালবাসেন আমি জানি। তাঁর কথা ভেবেই ভিডিওটা এডিট করার সময়ে গানের প্রিল্যুড আর ইন্টারল্যুডের অংশে আমার তোলা কয়েকটা স্টিল ছবিও জুড়ে দিয়েছি। আমি জানি যেগুলো তাঁর মাপের নয়, অতি সামান্য। তবু… তাঁকে আমার প্রণাম।
* * *
আর হ্যাঁ, এই গানের সাথে যে মিউজিক ট্র্যাকটা শোনা যাচ্ছে, সেটা ইন্টারনেট থেকে খুঁজে পেতে ডাউনলোড করা। দ্বিতীয় ইন্টারল্যুডে স্রেফ এডিট করে সুরের সামান্য অদলবদল করে নিয়েছিলাম। কার যন্ত্রানুসঙ্গ পরিচালনা, বা কার গাওয়া অ্যালবামের ট্র্যাক, কোনটাই আমার জানা নেই। এই ‘গেনো’ আমিটার সামান্য আনন্দযাপন ছাপিয়ে কেউ নিজেকে আবিষ্কার করে ফেলার আগেই তাই বলে রাখলাম – অজ্ঞতা মার্জনীয়। বাণিজ্য আমার উদ্দেশ্য নয়।
০৮ অক্টোবর, সোমবার, ২০১২
দমদম ক্যান্টনমেন্ট
Lelhata khub sundor. Kotodin pore porlam…
🙂
Ami sure vese gechi, khub valo lagche…….
আরিববাস! এ কার কণ্ঠস্বর! থ্যাংক ইউ! থ্যাংক ইউ!
amader somnath da sotti y asadharon…..ek kothai…..eke bare onno rokom ekta manus….r sumanta babur ei onno rokom m gift tao darun…..lekha ta bes bhalo laglo………….
যথার্থই বলেছেন ঈশিতা, সত্যি সোমনাথদার জবাব নেই। ধন্যবাদ নেবেন।
eyi jogot ta sudhu tomar hote parena….oneker howa joruri…khoooob mon bhora
🙂